লবণাক্ততা বৃদ্ধি: কৃষিজমির উপর প্রভাব

Word Count: 2900

Probable Reading Time: 12 Minutes

Verified By: কৃষিবিদ তন্ময় মজুমদার 

Summery 

এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বাস্তবতা, যেখানে লবণাক্ততা বৃদ্ধি কৃষি, অর্থনীতি এবং মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনছে। জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত সেচের কারণে লবণাক্ততার মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে, যা ফসল উৎপাদন এবং কৃষকদের জীবিকা সংকটের সৃষ্টি করছে। তবে, এই সংকট মোকাবিলায় লবণ-সহনশীল ফসলের চাষ, আধুনিক সেচ ব্যবস্থা এবং সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা যেতে পারে। কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করে আমরা এই সমস্যা সমাধান করতে পারি।

এই লেখাতে আলোচনা করা হয়েছে

  • লবণাক্ততা কী এবং এর কারণসমূহ
  • বাংলাদেশে লবণাক্ততার সমস্যা
  • লবণাক্ততার প্রভাব কৃষি ব্যবস্থাপনায়
  • লবণাক্ততার সামাজিক এবং স্বাস্থ্যগত প্রভাব
  • বাংলাদেশে লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে সম্ভাব্য সমাধান

একটি ভোরে সাতক্ষীরা জেলার এক কৃষক মাঠে গিয়ে দেখেন তাঁর ধানের ক্ষেত থেকে সোনালি রংয়ের ফলন হারিয়ে গেছে। জমির প্রতিটি অংশে লবণের ছাই জমে গিয়েছে, আর গাছগুলো শুষ্ক হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফলস্বরূপ যে ফসল তিনি আশা করেছিলেন, তা গলে গিয়ে মাটি হয়ে যাচ্ছে। একসময় যা ছিল তার জীবিকা, আজ তা হয়ে উঠেছে এক বড় শঙ্কা। এই দৃশ্য কোনো কাল্পনিক গল্প নয়, বরং বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বাস্তবতা। লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন, যার ফলে দেশের কৃষি ব্যবস্থায় ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে।

লবণাক্ততা, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, দেশের কৃষি উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে, যা কৃষি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে হাজার হাজার কৃষক জীবিকা হারাচ্ছেন। আজকে আমরা আলোচনা করব লবণাক্ততা বৃদ্ধিতে কৃষিজমির উপর কেমন প্রভাব পড়ছে, কীভাবে এটি বাংলাদেশের কৃষি, অর্থনীতি এবং মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে এবং এর প্রতিকার কী হতে পারে। 

লবণাক্ততা কী এবং এর কারণসমূহ

লবণাক্ততা হল মাটিতে অতিরিক্ত লবণের উপস্থিতি, যা কৃষির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তা ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, জমির উর্বরতা নষ্ট করে এবং পানির শোষণ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। লবণাক্ততার প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায় উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে, যেখানে সমুদ্রের লোনা পানি মাটির মধ্যে প্রবাহিত হয়। সাধারণত, ২ থেকে ৪ dS/m (decisiemens per meter) লবণাক্ততায় কিছু ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে, আর ৮ dS/m এর উপরে তা অধিকাংশ ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়।

লবণাক্ততার কারণে মাটির ক্ষতি:

  • মাটি ও পানির সম্পর্ক: লবণাক্ত মাটি পানি শোষণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। মাটিতে অতিরিক্ত লবণ জমে যাওয়ার কারণে পানি মাটির মধ্য দিয়ে সহজে প্রবাহিত হতে পারে না, যার ফলে গাছের শিকড় পানির উৎস থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করতে সক্ষম হয় না।

  • মাটির গঠন নষ্ট করা: উচ্চ লবণের কারণে মাটির গঠনও পরিবর্তিত হয়, যার ফলে মাটি শক্ত হয়ে যায় এবং এর মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়া বা শিকড়ের বিস্তার সম্ভব হয় না।

লবণাক্ততার বিভিন্ন ধরনের কারণ:

  1. প্রাকৃতিক কারণসমূহ:

  • সমুদ্রের লোনা পানি: উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে সমুদ্রের লোনা পানি মাটির মধ্যে প্রবাহিত হয়ে লবণাক্ততা বৃদ্ধি করে। সাধারণত, উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদী গুলোতে পানির প্রবাহ কম হলে লোনা পানি মাটির মধ্যে প্রবাহিত হয় এবং কৃষিজমির উপর তার প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

  • বৃষ্টিপাতের অভাব: বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকলে, মাটি থেকে লবণ অপসারণ হতে পারে না। এতে মাটির লবণ জমে যাওয়ার হার বৃদ্ধি পায়, যা মাটির উর্বরতা নষ্ট করে।

  • জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের সাগরের জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা লবণাক্ততার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

2. মানবসৃষ্ট কারণসমূহ:

  • অতিরিক্ত সেচ: অতিরিক্ত সেচের ফলে মাটির নিচের পানির স্তর বৃদ্ধি পায় এবং পানি উপরের দিকে উঠে আসে, যেখানে লবণাক্ততা জমে যেতে শুরু করে। দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত সেচ দিলে জমির মধ্যে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ফসলের ক্ষতি করে।

  • অপ্রতিসম নিষ্কাশন পদ্ধতি: জমির পানি নিষ্কাশনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না থাকলে, মাটির উপর লবণ জমে থাকার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে জমিতে অতিরিক্ত লবণ জমে যায়, যার ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং কৃষি উৎপাদন কমে যায়।

  • বাঁধ নির্মাণ: বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণের ফলে লবণযুক্ত পানি জমিতে প্রবাহিত হতে থাকে এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় এসব বাঁধের কারণে নোনা পানি মাটির মধ্যে আটকে থাকে, যা স্থানীয় কৃষিকাজের জন্য বিপজ্জনক।

  • অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ: চিংড়ি চাষের জন্য ব্যবহৃত লবণপানি জমিতে প্রবাহিত হয়, যা জমির লবণাক্ততা বাড়াতে সহায়তা করে। কিছু কৃষক চিংড়ি চাষের জন্য লবণ পানি ব্যবহার করেন, কিন্তু এভাবে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং মাটির উর্বরতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশে লবণাক্ততা​র সমস্যা

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার সমস্যা দীর্ঘদিনের। দেশটির ৩০% কৃষিজমি উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত, যেখানে লবণাক্ততার প্রভাব মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ২৮.৫ লাখ হেক্টর জমি লবণাক্ততার দ্বারা প্রভাবিত, যার মধ্যে ১০.৫৬ লাখ হেক্টর জমি তীব্র লবণাক্ততায় আক্রান্ত। গত ৪০ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা ২৬% বেড়েছে, এবং গত এক দশকে এই হার ৩.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সমস্যা আরও তীব্র হচ্ছে, যা বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থাকে এক কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলছে।

উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণ

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা যেমন সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, এবং পটুয়াখালি লবণাক্ততার জন্য সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। এখানকার কৃষি জমি সাগরের জলস্তরের কাছাকাছি অবস্থান করায়, সমুদ্রের লোনা পানি ঢুকে পড়া এবং নদীর পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে জমিতে লবণ জমে থাকে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে ২৮.৫ লাখ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে প্রায় ১০.৫৬ লাখ হেক্টর জমি লবণাক্ততার শিকার। এর মধ্যে ৫ লাখ হেক্টর জমি তীব্র লবণাক্ততায় আক্রান্ত, যেখানে ফসল উৎপাদন সম্ভব নয় বা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

লবণাক্ততা বৃদ্ধির প্রভাব কৃষিতে

লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের কৃষিতে কয়েকটি মারাত্মক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হল:

  • ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়া: লবণাক্ত জমিতে ধান, সরিষা, সবজি এবং ফলমূলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের জমিতে ধানের ফলন ৩০-৪০% কমে গেছে।

  • ভূগর্ভস্থ পানির সংকট: লবণাক্ত পানির কারণে পানির উৎস সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, যা কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত সমস্যা সৃষ্টি করছে। কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত পানির উৎস না থাকলে তাদের ফসলের উৎপাদনও কমে যায়।

ভবিষ্যত প্রভাব এবং চ্যালেঞ্জ

লবণাক্ততা বৃদ্ধি যে শুধু বর্তমান পরিস্থিতির জন্য উদ্বেগজনক, তা নয়, ভবিষ্যতেও এর প্রভাব আরও তীব্র হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আগামী দশকে উপকূলীয় অঞ্চলের আরও বিশাল এলাকা লবণাক্ততার শিকার হতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি) রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯ জেলার প্রায় ১৩৩ লাখ মানুষ লবণাক্ততার কারণে বাস্তুচ্যুত হতে পারে।

লবণাক্ততার প্রভাব কৃষি ব্যবস্থাপনায়

বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় লবণাক্ততা একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৩০% কৃষিজমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত, এবং এটি ধীরে ধীরে অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। লবণাক্ততা, যা মূলত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে, কৃষি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এই প্রভাব কৃষকের জীবিকা, জমির উর্বরতা, এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সমস্যায় ফেলতে পারে।

মাটির গঠন ও উৎপাদনশীলতার ক্ষতি

লবণাক্ততা যখন মাটিতে প্রবাহিত হয়, তখন তা মাটির গঠন পরিবর্তন করে। মাটির লবণীয়তা বাড়ার ফলে মাটি শক্ত হয়ে যায় এবং এর মধ্যে পানি শোষণের ক্ষমতা কমে যায়। এতে করে শিকড়ের মাধ্যমে পানি ও পুষ্টির শোষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে গাছের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ফলনের হার কমে যায়। অধিক লবণ জমে থাকার কারণে মাটির মধ্য দিয়ে গাছের শিকড়ের প্রবাহ কমে যায়, ফলে গাছগুলো প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও পানি শোষণ করতে পারে না।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) অনুযায়ী, দক্ষিণাঞ্চলে ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমি তীব্র লবণাক্ততায় আক্রান্ত, যা ফসল উৎপাদনে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে।

ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়া

লবণাক্ততার সবচেয়ে বড় প্রভাব ফসলের উৎপাদনের উপর পড়ে। বিভিন্ন ধরনের ফসল লবণাক্ত মাটিতে ভালো জন্মায় না বা উৎপাদন কমে যায়। বিশেষ করে ধান, সরিষা, শাকসবজি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শস্যগুলোর উৎপাদন লবণাক্ততার কারণে ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ধানের ফলন ৩০-৪০% কমে গেছে, কারণ এই অঞ্চলগুলোতে মাটির লবণীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পানির শোষণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

BARI-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত জমিতে ধান উৎপাদন ২০-৩০% কমে গেছে এবং তীব্র লবণাক্ততা এ এলাকায় ৩৫%-এর বেশি ফলন হ্রাস ঘটাচ্ছে।

লবণাক্ততার কারণে শাকসবজি ও ফলমূলের উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলের গাছগুলোর জন্য সূর্যের আলো শোষণ এবং পুষ্টি গ্রহণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে, ফলন কমে যায় এবং গুণগত মানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলমূল যেমন পেঁপে, কলা, এবং লেবু বিশেষভাবে লবণাক্ততার কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

লবণাক্ততার প্রভাব মাটির পুষ্টি এবং জৈব পদার্থে

লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে মাটির পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। লবণ জমে থাকলে মাটির জৈব পদার্থ, যেমন হিউমাস এবং ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যায়। মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ার ফলে কৃষকরা যে জমিতে ফসল ফলানোর আশা করেন, সেখানে ফলন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া, লবণাক্ততার কারণে জমির গঠনও বদলে যায়, যার ফলে মাটির পৃষ্ঠ শক্ত হয়ে যায় এবং পানি শোষণের ক্ষমতা কমে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ৬৫% কৃষিজমি লবণাক্ততার কারণে জৈব পদার্থের কার্যক্রম কমে যাচ্ছে, যার প্রভাব কৃষির উৎপাদনশীলতার উপর পড়ে।

পানি ব্যবস্থাপনা ও শিকড়ের সমস্যা

লবণাক্ততার কারণে জমির পানি শোষণের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। শিকড়ের মাধ্যমে যে পানি শোষণ প্রক্রিয়া ঘটে, তা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শিকড়ের মধ্যে মিষ্টি পানি শোষণের বদলে লবণাক্ত পানি প্রবাহিত হলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি থেমে যায়। এটি গাছের শিকড়ের জীবন্ত কোষের ক্ষতি করে এবং শিকড়ের কার্যক্ষমতাও কমিয়ে দেয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে প্রভাব

লবণাক্ততার প্রভাব শুধু কৃষিতে সীমাবদ্ধ নয়, মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ খাতেও পড়ছে। উপকূলীয় অঞ্চলের মাছচাষের ক্ষেত্রে লবণ পানি ব্যবহার করা হয়, তবে অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে মাছের জীবনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে মাছের উৎপাদন কমে যায় এবং দেশীয় মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

লবণাক্ততার সামাজিক এবং স্বাস্থ্যগত প্রভাব

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে লবণাক্ততার বৃদ্ধি শুধু কৃষি এবং অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর নয়, এর গভীর প্রভাব পড়ছে মানুষের স্বাস্থ্যে এবং সমাজে। লবণাক্ততার কারণে চাষযোগ্য জমি সংকুচিত হচ্ছে, ফলে খাদ্য উৎপাদন কমছে এবং এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবিকা ও সামাজিক অবস্থা বিপর্যস্ত হচ্ছে। একইভাবে, এই সমস্যার কারণে শারীরিক সমস্যাও বাড়ছে, যা রোগ-ব্যাধির বিস্তার ঘটাচ্ছে।

স্বাস্থ্য সমস্যা

উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত পানির ব্যবহার মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর বিপজ্জনক প্রভাব ফেলছে। লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, যেমন ত্বকের রোগ, চোখের সমস্যা, পায়ের চামড়া ওঠা, চুলকানি এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগ।

  • ত্বকের রোগ: লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে অনেকের ত্বকে জ্বালা-পোড়া, একজিমা, এবং বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন দেখা দেয়। বিশেষ করে গরম ও আর্দ্র মৌসুমে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়।

  • চোখের সমস্যা: লবণাক্ত পানি চোখে প্রবাহিত হলে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, যার ফলে চশমার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি, চোখের রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া, এবং দীর্ঘমেয়াদী শুষ্ক চোখের সমস্যা দেখা দেয়।

  • পায়ের চামড়া ওঠা এবং চুলকানি: উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে অনেকের পায়ের ত্বকে চামড়া ওঠে, যা তীব্রভাবে চুলকায় এবং জীবাণুর আক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।

  • শ্বাসতন্ত্রের রোগ: লবণাক্ততা এবং দূষিত পানি শ্বাসনালীতে প্রবাহিত হলে, দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসতন্ত্রের রোগ যেমন হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং অন্যান্য শ্বাসজনিত রোগ হতে পারে।

স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান: বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BBS) রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে লবণাক্ততার কারণে ১.৩ লাখ মানুষ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন

নারী ও শিশুদের উপর প্রভাব

লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে নারীদের এবং শিশুদের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি বিশেষভাবে প্রকট হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে নারীরা সাধারণত পানি সংগ্রহ ও কৃষিকাজের সাথে জড়িত থাকেন। লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে তাদের ত্বক, চোখ ও শ্বাসতন্ত্রের স্বাস্থ্য আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

  • নারীদের গর্ভকালীন সমস্যা: লবণাক্ত পানির কারণে গর্ভবতী নারীদের জন্য আরও বেশি ঝুঁকি রয়েছে। এতে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভপাত এবং প্রি-ম্যাচিউর শিশুর জন্মের আশঙ্কা থাকে।

  • শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি: শিশুদের জন্য লবণাক্ত পানি অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি তাদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া, পানি বাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, আমাশয় এবং পানিবাহিত চর্মরোগ শিশুমাত্রে বেশি দেখা দেয়।

এমতাবস্থায় সম্ভাব্য সমাধান

লবণাক্ততা বৃদ্ধির সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব মোকাবিলায় কয়েকটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন:

  1. স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি: স্থানীয় জনগণকে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে স্বাস্থ্য ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা।

  2. পরিষ্কার পানি সরবরাহ: উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করা, যেমন নতুন পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট স্থাপন এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা।

  3. কৃষিকাজে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার: লবণ-সহনশীল ফসলের চাষ এবং কৃষকদের জন্য নতুন প্রযুক্তির সহজলভ্যতা বৃদ্ধি করা।

এভাবেই, লবণাক্ততার প্রভাব শুধু কৃষি বা পরিবেশ নয়, সামাজিক এবং স্বাস্থ্যগত ক্ষেত্রেও বিশাল প্রভাব ফেলছে, যার মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

বাংলাদেশে লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে সম্ভাব্য সমাধান

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে, শুধু সরকারী উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, বরং গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষক এবং স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টাও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু সম্ভাব্য সমাধান আলোচনা করা হল:

১. লবণ-সহনশীল ফসলের উন্নয়ন এবং চাষ

লবণ-সহনশীল ফসলের উদ্ভাবন একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হতে পারে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) ইতিমধ্যে কিছু লবণ সহনশীল ধানের জাত যেমন BRRI ধান-47 যা সীমিত লবণমাত্রার জমিতে চাষযোগ্য। তবে, এই জাতগুলো কিছু অঞ্চলে সীমাবদ্ধ, যেখানে লবণমাত্রা আরও বেশি। তাই, ভবিষ্যতে এমন ধানের জাত উদ্ভাবন প্রয়োজন, যা উচ্চ মাত্রার লবণ সহ্য করতে সক্ষম।

বর্তমানে BARI অধিক মাত্রার লবণ সহ্য করতে সক্ষম ধানের জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য এমন জাত উদ্ভাবন করা যা ১৬ dS/m পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে।

২. আধুনিক সেচ পদ্ধতি এবং পানি ব্যবস্থাপনা

লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। অপরিকল্পিত সেচ এবং অপ্রতিসম নিষ্কাশন পদ্ধতির ফলে লবণ জমে যায় এবং কৃষি জমির উর্বরতা কমে যায়। এই সমস্যা সমাধানে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং এবং আধুনিক সেচ পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন: উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেচ ব্যবস্থাপনা পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন। যেমন, ড্রিপ সেচ পদ্ধতি এবং সেন্ট্রালাইজড সেচ সিস্টেম যা পানি সঞ্চালন এবং ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ায়।

  • বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ: বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ট্যাঙ্ক বিতরণ বা রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম উন্নয়ন করা যেতে পারে। এটি উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের সেচের জন্য দরকারি পানি সরবরাহ করতে সাহায্য করবে।

  • নদী ও খাল পুনর্খনন: নদী ও খালগুলো পুনর্খনন এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা যেতে পারে যাতে লবণাক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশন হয়ে যায় এবং জমির উপর লবণের স্তর কমে যায়।

৩. লবণ-সহনশীল গাছ এবং পরিবেশগত পুনরুদ্ধার

লবণাক্ততার ক্ষতিকর প্রভাবকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে, লবণ সহ্য করতে সক্ষম গাছ ও উদ্ভিদের চাষের দিকে মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে। যেমন, বাবলা গাছ, কেতাবর গাছ এবং লবণ-সহনশীল শস্য উদ্ভাবন করা যেতে পারে। এই গাছগুলো মাটির গঠন এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সাহায্য করতে পারে।

  • বাবলা গাছ চাষ: এই গাছটি লবণাক্ত এলাকায় বৃদ্ধি পেতে সক্ষম এবং এটি মাটি ক্ষয় রোধ করতে সহায়ক।

  • বাড়ানো যেতে পারে বনাঞ্চল: উপকূলীয় অঞ্চলে বনাঞ্চল বৃদ্ধির মাধ্যমে লবণাক্ততার প্রভাব কমানো সম্ভব। সুন্দরবনের মতো বনাঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা কমানো সম্ভব।

  • মাটির উন্নয়ন প্রকল্প: বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাটির পুনরুদ্ধারের কাজ করা যেতে পারে, যেমন বায়োচার এবং কৃষি পদ্ধতির পুনর্গঠন।

৪. উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নদী ও সমুদ্রের লবণাক্ত পানি প্রবাহ কমাতে বাঁধ নির্মাণ এবং বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে লবণাক্ত পানি জমিতে প্রবাহিত হয়, যা কৃষি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

  • উন্নত বাঁধ নির্মাণ: উপকূলীয় বাঁধগুলো পুনরায় নির্মাণ করা এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বাঁধগুলোকে শক্তিশালী করা উচিত, যাতে সেগুলো সামুদ্রিক ঢেউ এবং জলোচ্ছ্বাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

  • নদী সংস্কার: নদীর তীরের বাঁধ পুনঃনির্মাণ এবং নদী খননের মাধ্যমে লবণাক্ত পানি প্রবাহ রোধ করা সম্ভব।

৫. স্থানীয় জনগণের জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি

লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে সফলতার জন্য স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে তারা নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং সেচ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন হন।

  • কৃষকদের প্রশিক্ষণ: কৃষকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ সেশন এবং কর্মশালা আয়োজন করা যেতে পারে, যাতে তারা লবণ-সহনশীল ফসল চাষ এবং সেচ ব্যবস্থাপনা নিয়ে জানাতে পারেন।

  • সচেতনতা বাড়ানো: স্থানীয় জনগণকে লবণাক্ততার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও এবং স্থানীয় প্রশাসন একযোগে কাজ করতে পারে।

৬. সরকারী নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা

সরকারী নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এই সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত নতুন আইন এবং কর্মসূচী চালু করতে হবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা গ্রহণ করে লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

  • সরকারী উদ্যোগ: উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে লবণ-সহনশীল কৃষি পদ্ধতির জন্য নতুন নীতিমালা এবং প্রণোদনা ব্যবস্থা চালু করা উচিত।

  • আন্তর্জাতিক সহায়তা: বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর সাহায্য নিয়ে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

বাংলাদেশে লবণাক্ততার সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য সঠিক নীতি, প্রযুক্তি এবং সচেতনতার মাধ্যমে আমরা উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষি ও পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ নিতে পারি। লবণ-সহনশীল ফসলের চাষ, পানি ব্যবস্থাপনা, বাঁধ নির্মাণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ এই সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকারের সহায়তায় এবং স্থানীয় কৃষকদের সচেতনতার মাধ্যমে আমরা লবণাক্ততার প্রভাব কমিয়ে কৃষি উৎপাদন এবং মানুষের জীবনযাত্রাকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হব।

Reference: 

  1. Food and Agriculture Organization (FAO)
  2. National Adaptation Plan of Bangladesh (2023-2050)
  3. Bangladesh Bureau of Statistics (BBS)
  4. Bangladesh Agricultural Research Institute (BARI)
  5.  The Daily Ittefaq
  6. Kaler Kantho
  7. Jago News
  8. Appropedia

Share this post
Sign in to leave a comment
ভূগর্ভস্থ পানির বিষাক্ততা: আর্সেনিক দূষণ